জারিন রেকর্ডিং স্টুডিওয় ঢুকতেই সবাই অবাক। এ আবার কে? কোথা থেকে এল? হাতে ওটা কি? রোগা-পাতলা, ফরসা চেহারার অতি সাধারণ দেখতে মেয়েটিকে ঘিরে সবারই কৌতূহল। রোশন এগিয়ে আসেন। দৃশ্য বুঝিয়ে দেন। গানের লাইন ধরিয়ে দেন, ধরিয়ে দেন নোটেশন। জায়গা ছেড়ে দেয় অন্যান্য যন্ত্রানুসঙ্গীরা। স্টুডিওর একপাশে, জড়সড় হয়ে সরোদ হাতে বসে লাজুক মেয়েটি। ততক্ষণে চমকে উঠেছে সবাই। এই মেয়ে সরোদ বাজায়! এমনটি তো দেখা যায় না খুব একটা! অবশ্য সেদিকে হুঁশ নেই জারিনের। নির্দেশ পেয়েই দ্রুত হাতে বেঁধে নিয়েছে সরোদের তার। ইমন কল্যাণ রাগে। একবারটি তাকায় দূরে দাঁড়িয়ে থাকা বাবার দিকে। ইশারায় প্রণাম জানায়। চোখ বুজে স্মরণ করে দেবী সরস্বতীকে। সে পার্সি তো কি হয়েছে, সরস্বতী সকলেরই দেবী।
শুরু হয় রিহার্সাল। সংগীত পরিচালকের কিউ পেতেই ঝলসে ওঠে মেয়েটির সরোদ, অসামান্য দক্ষতায়। চমকে ওঠে সকলে। ইমনের এমন ট্রিটমেন্ট আগে কেউ শোনেনি। হাততালির ঝড় ওঠে স্টুডিওয়। মুখে হাসি রোশন, ইমরত খানের। জহুরির চোখ ভুল করেনি রত্ন চিনতে। দু’বারের টেক-এ রেকর্ড হয় গান। মহম্মদ রফির কন্ঠে ‘মন রে তু কহে না ধীর ধরে…’ গানের ইন্ট্রোয় পাকাপাকি জায়গা করে নেয় মেয়েটির সরোদের অপার্থিব মূর্ছনা। রচিত হয় ইতিহাস।
সেদিনের পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি সেই অখ্যাত পার্সি মেয়েটিকে; পরবর্তীকালে ভারতীয় সংগীসমাজ যাকে চিনবে জারিন দারুওয়ালা নামে।
লেখা: প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
পাঠ: শ্যামশ্রী সাহা
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস