বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। প্রদর্শিত হবে ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’। রবি ঘোষ গিয়েছেন সেখানে। তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। একদিন শপিংয়ে বেরিয়েছেন রবিবাবু ও তপেনবাবু। লম্বা দীর্ঘ চেহারার জার্মানদের পোশাক রবি ঘোষের গায়ে ঠিক ম্যাচ করছে না। শেষে এক জার্মান মহিলার সঙ্গে ছোটদের সেকশনে গিয়ে ছোটদের জামাকাপড় কিনে অত্যন্ত খুশি মনে বেরিয়ে আসেন!
সত্যি হলেও গল্পের মতোন না? হ্যাঁ ঠিক এইরকমই ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার। সময়ের শিলালিপি যাঁকে নিজের স্বর্ণাক্ষরে রবি ঘোষ বলে খোদাই করে রেখেছে।
ভাবতে অবাক লাগে, বাংলা ছায়াছবিতে ‘কমেডিয়ান’ হিসাবে যে–মানুষটি একপ্রকার মাইলস্টোন হিসাবে পূজিত, তাঁর নাকি অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছাই ছিল না! হতে চেয়েছিলেন বডিবিল্ডার। ছাত্রজীবন থেকেই দেহসৌষ্ঠবকে মন্দিরজ্ঞানে পুজো করতেন। ভারতের স্বাধীনতার বছরেই তাঁর ম্যাট্রিকুলেশন পাস। স্কুলজীবনে সহপাঠী ছিলেন উত্তমকুমারের ভাই প্রখ্যাত অভিনেতা তরুণ চট্টোপাধ্যায়ের। আশুতোষ কলেজে পড়ার সময় থেকে শুরু করেন নিয়মিত শরীরচর্চা। ব্যায়ামাগারে নিয়মিত শরীরচর্চা ছেড়ে দেওয়ার পরও মর্নিংওয়াকটা জারি রেখেছিলেন।
বডিবিল্ডার হতে চেয়েছিলেন বটে; তবে ছোট থেকেই যেহেতু অভিনয়ের সাহচর্যেই তাঁর বেড়ে ওঠা, তাই কোথাও যেন একটা বিষয়টাকে অস্বীকারও করতে পারতেন না। ছাত্রজীবনে গড়ে তোলেন ‘বন্ধুমন’ নামের একটি ছোট নাটকের দল। আশুতোষ কলেজের ছাদে চলত তাঁদের রিহার্সাল। অথচ এই অভিনয়ের জন্য তাঁকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হতে হয়! বাবা জিতেন্দ্রনাথ একেবারেই পছন্দ করতেন না ছেলে অভিনয় করুক। তাঁর মনে হত অভিনয় করা মানে সময়ের অপচয়।
ব্যাঙ্কশাল কোর্টে কয়েক বছর চাকরি করলেও বেশিদিন থাকতে পারলেন না। মন ঝুঁকল অভিনয়ের দিকেই। পেশাদার অভিনয় শুরু করেন ‘সাংবাদিক’ নাটক দিয়ে, পরিচালক উৎপল দত্ত। ১৯৫৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর, উৎপল দত্তর পরিচালনায় মিনার্ভায় অভিনীত হবে ‘অঙ্গার’ নাটক। প্রথম শো। নাটকের শেষ রাত পর্যন্ত অভিনয় করেন রবি ঘোষ। ওই নাটকে অভিনয়ের জন্যই সংশ্লিষ্ট বছরে পান ‘উল্টোরথ’ পুরস্কার। অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘটক বিদায়’ নাটকটি প্রায় ৫০০ নাইট চলেছিল স্টার থিয়েটারে! এই নাটকেও অভিনয় করেছিলেন রবি ঘোষ। মঞ্চাভিনেতা রবি ঘোষ ‘চলাচল’ নামে থিয়েটারের একটি দলও তৈরি করেন। ‘অলীকবাবু’-সহ ৮টি নাট্য প্রযোজনার কাজ করেছে দলটি। তারপর? শুনুন…
লেখা: বিতান দে
পাঠ: শ্যামশ্রী সাহা
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস