চৈতন্য তামহানের নতুন ছবি দ্য ডিসাইপেল-এর শ্রেষ্ঠ সিনেমাটিক মূহুর্ত, নিঃসন্দেহে, অন্ধকার, ফাঁকা মুম্বই শহরের রাস্তায় ঈষৎ স্লো মোশনে মোটরবাইক চালাতে থাকা ছবির প্রধাণ চরিত্র একলা শরদ নিরুলকরের একাধিক দৃশ্যগুলি। শরদের কোথাও যাওয়ার নেই, কিচ্ছু করার নেই – অন্য কোনো গানওলাও নেই তার এই নিদারুণ সংকটের সময়ে।
শরদ নিরুলকর উত্তর ভারতীর শাস্ত্রীয় সংগীতের নিষ্ঠাবান ছাত্র – এই সংগীতের দুনিয়ার ভোকাবুলারিতে যাকে বলা হয় ‘শিষ্য’ (ছবিটির শিরোনামের বাংলা অনুবাদ-ও বটে)। উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের শিল্পীরা মধ্য বা দ্রুত লয়ে যখন বন্দীশ পারফর্ম করেন, তখন, যেমন সংগীতের ‘রিফ্রেইন’ বা ‘ধুয়ো’ হিসেবে সেই বন্দীশের প্রথম লাইন একই সুর নিয়ে বারবার ফিরে ফিরে আসে – তামহানের ছবিতেও বারবার ফিরে ফিরে আসে এই শট – কখনও সামনে থেকে মিড-এ, কখনও পিছন থেকে লং-এ, কখনও আরও পিছন থেকে এক্সট্রিম লং-এ প্রায় ম্যাজিকাল এই মূহুর্তগুলো আমরা বারবার দেখতে থাকি।
গানের ধুয়োর মত ফিরে ফিরে আসা ছবির ওই দৃশ্যের সাউন্ডট্র্যাকের সেই শব্দের মধ্যেই যেন এ ছবির সংক্ষিপ্তসার আছে – যেভাবে সুক্ষ্ম ফাটল চুঁইয়ে জানলার আড়াল দিয়ে আলো ঘরে চলে আসবেই, তেমনই – সে ভারী ভারী কথার মধ্যেও, শত চেষ্টা সত্ত্বেও আটকানো যায় না পুরোনো ক্যাসেটের ক্যাচক্যাচ শব্দ। জগতে শুদ্ধ কিছু নেই, পবিত্র কিছু নেই, বাস্তব থেকে পালিয়ে আপনি বাঁচতে পারবেন না – ‘দ্য ডিসাইপেল’ যেন বলে ওঠে – আসুন আমরা বাস্তবের মুখোমুখি হই, আসুন আমরা সংঘাতের মুখোমুখি হই, আসুন আমরা দন্দ্বের মুখোমুখি হই। গোটা ছবিতে শাস্ত্রীয় সংগীতের গম্ভীর পরিবেশের শেষে, আমাদের জন্য ট্রেনের ভিখিরী শিল্পীর গাওয়া খোলা হাওয়ার গানের মতই, প্রাণভরে শ্বাস নেওয়ার পরিসর অপেক্ষা করে আছে।
ছবির শুরু থেকে এই সংগীতের জগতের ‘মহান’ ট্র্যাডিশনের প্রতি শ্রদ্ধেয় থেকেও তামহানে অদ্ভুত ঠান্ডা দূরত্ব রেখে দেন – যা আমাদের সমীহ করার পাশাপাশি সন্দেহ করতেও শেখায় – বলতে শেখায় বিশ্বের যে কোনো কিছুর মতই এই ‘মহান’ ট্র্যাডিশনটিকেও সম্পূর্ণ ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ দেওয়ার আগে, খানিক দূর থেকে, ক্রিটিকালি দেখা উচিৎ। এ ট্র্যাডিশনের শিল্পী-ভক্ত-সমালোচক – প্রায় সবাই যে কাজ করতে ভয় পান – তামহানে এই কাজের সাহস দেখিয়েছেন।
লেখা: সায়ন্তন দত্ত
পাঠ: কোরক সামন্ত
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস