‘লুডো’। শব্দটা শুনলেই অ্যাদ্দিন জিভ কেটে চোখ নামাত বাঙালি। তার অবচেতনজুড়ে পায়চারি করত একটা সফ্ট টয়। ফরসা। গোলগাল। নীল শাড়ি। লাল পাড়। কাঁধে ঝোলা। মাথায় জনৈক নেত্রীর স্টাইলে ইয়াব্বড় টিপ। ‘এক দান লুডো খেলা’– বাক্যটার গভীরে ঘাপটি মেরে থাকত ফিচেল আহ্বান। রসালো ইঙ্গিত।
শব্দটার পুনরুত্থান হল নতুনভাবে। ১২ নভেম্বর। নেটফ্লিক্সে। নীল শাড়ি পরা কোনও দিদি নয়; বরং এক দাদার হাত ধরে এবার। ঘটনাচক্রে তিনিও বাঙালি। অনুরাগ বসু পরিচালিত ‘লুডো’র ঘুঁটি আমাদের আছড়ে ফেলল জীবন-মৃত্যুর ককটেলে চোবানো একটা বোর্ডের সামনে।
‘যারা মারা যায়,হোলসেল তারা সবাই কি পাপী?’ পাপ-পুণ্য আসলে কী? পাপ-পুণ্যের এই সিঁড়িভাঙার অঙ্ক আদতে কষেন কে? কীসের ভিত্তিতেই বা কষা হয়? ধুন্দুল গাছ থেকে মুহর্মুহু ফল টপকে পড়ার ঘটনার মতোই এ প্রশ্ন সহজ। কিন্তু ’হলে কী হবে বাওয়া… উত্তরটি যে কঠিন! এতটাই,যে,উত্তর দিতে বেগ পেতে হয়;এমনকী উপরওয়ালাকেও!
ভগবানের যখন এমন ল্যাজেগোবরে অবস্থা,তখন লুডোর বোর্ড খুলে চার রঙের চারটি গল্প পরিবেশন করেছেন অনুরাগ। একটা ভাইরাল সেক্স টেপ, একটা পরকীয়া, বাবা-মার অবহেলায় অভিমানী এক শিশুকন্যা আর কর্মস্থলে তুমুল র্যাগড হওয়া দুই মানুষ। চার কাহিনি। চারটে আলাদা রংয়ের ঘুঁটি। তাদের নিয়ন্ত্রক আর সংযোগকারী হল শহরে ঘটে যাওয়া একটি খুনের ঘটনা এবং তার খুনি। হলদে, লাল, সবুজ, নীল চার ঘুঁটি ও তাদের কেন্দ্রীয় চরিত্রকে সাদা-কালো ছক্কার মতো নিয়ন্ত্রণ করছে ওই খুন আর খুনি। চার রঙের ভবিতব্য সন্তপর্ণে জড়িয়ে যাচ্ছে পরস্পরের সঙ্গে। কখনও বা পাশ কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে। কখনও স্রেফ ছুঁয়ে যাচ্ছে। আলতো করে। সেকেন্ড চান্স পাচ্ছে কেউ কেউ, কেউ কেউ পাচ্ছে ওই সামান্য পোয়েটিক জাস্টিসটুকু,তো কাউকে হতে হচ্ছে নিয়তির অন্যায় শিকার।
কখনও ছক্কা, কখনও পুট; কখনও নিজের ট্র্যাক ধরে স্মুথলি এগিয়ে যাওয়া, তো কখনও বাধার পর বাধা; কখনও সাফল্যের শীর্ষে দাঁড়ানো, কখনও ছিটকে পড়া ‘জীবন’ নামক বোর্ড থেকে।
‘লুডো’ আমাদেরকে পরিচালক অনুরাগ ছাড়াও আরেক আনকোরা অনুরাগ উপহার দিয়েছে। লুডোর দানের মতোই সেটাও সারপ্রাইজ!
লেখা: সোহিনী সেন
পাঠ: অনুরণ সেনগুপ্ত
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস