গত শতকের দশক। সাম্প্রদায়িকতার রক্তাক্ত হানাহানিতে সে বড় ভয়ংকর সময়। সদ্য দু’ভাগে ভেঙে গিয়েছে ভারতবর্ষ। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গোয়েন্দা ব্যোমকেশকে একাধিকবার ফেলেছেন এই সময়ের প্রেক্ষিতে, নানাভাবে গত শতকের রক্তাক্ত চার–পাঁচের দশক ফিরে ফিরে এসেছে তাঁর গল্পে-উপন্যাসে। ‘মগ্ন মৈনাক’ গল্প এইসময়ের প্রেক্ষিতেই লেখা, যা সৌমিক হালদারের নির্দেশনায় ব্যোমকেশ সিরিজের সপ্তম সিজন হিসাবে সদ্য মুক্তি পেয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘হইচই’–তে।
মগ্নমৈনাক, অর্থাৎ কি না ঘুমিয়ে থাকা মৈনাক পর্বত, যা পুরাণের গল্প অনুযায়ী ইন্দ্রর বজ্রের হাত থেকে বাঁচতে সমুদ্রের তলায় নিজেকে ডুবিয়ে রেখে মাঝে মাঝে নাক বের করে তার পরিস্থিতি জানান দেওয়ার চেষ্টা করে। সেই ‘মগ্ন মৈনাক’ শিরোনামটিই, বলা চলে এ গল্পের প্রধাণতম থিম। মৈনাক পর্বতের মতোই এ গল্পের ভিলেন আপাতভাবে ক্ষমতা, প্রতিপত্তি আর নিজের সুবিখ্যাত রাজনীতিবিদের আড়ালে লুকিয়ে রাখে তাঁর হিংস্র খুনী সত্তা এবং গোপন অপরাধের বোঝা; যে নাক থেকে গোটা পর্বতকে টেনে তুলতে প্রয়োজন হয় আমাদের প্রিয় সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী–র।
গল্প থেকে ওয়েব সিরিজ, ফিল্ম ইত্যাদি হলে আজকাল আর নির্মাতারা খুব একটা রিস্ক নেন না, প্রায় বইয়ের পাতাকে যথাসম্ভব অনুসরণ করেই সিরিজ বা ফিল্মের চিত্রনাট্য নির্মিত হয়। একদিক থেকে এ ভাল, কারণ যথেষ্ট কনফিডেন্স না-থাকলে গল্পকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। বাংলা সিনেমার জগতে গল্পকে অনুসরণ করেই যে খারাপ সিরিজ বা ফিল্ম ভূরি ভূরি নির্মিত হয়, তার উদাহরণ খুঁজে পেতে অসুবিধা হওয়ার কোনও কথাই নেই। তাই ব্যোমকেশ সিরিজের দ্বিতীয় সিজন-এ পরিচালনায় ফিরে আসা সৌমিক হালদার এ বিষয়ে সেফ খেলেছেন, এবং নিঃসন্দেহে, তা খেলেছেন ভালই। গল্পকে আশ্রয় করে বেড়ে উঠলেও সৌগত বসুর চিত্রনাট্য সিনেমাটিক দিক থেকে সার্থক, তাকে গল্পের পরগাছা মনে হয় না। সিরিজের কাঠামোর একটি সিনেমাটিক স্বাতন্ত্র্য নির্মাণ করা সম্ভব হয়, যা যে কোনও সার্থক চলচ্চিত্রের একেবারে প্রাথমিক কথা হলেও বাংলা বাজারে এ জিনিস বড় সুলভ নয়। তাই এদিক থেকে সৌগত-সৌমিকের অভিনন্দন প্রাপ্য।
তারপর? শুনুন…
লেখা: সায়ন্তন দত্ত
পাঠ: শঙ্খ বিশ্বাস