মনে পড়ছে আপনাদের মুম্বই ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালের প্যানেল ডিসকাশনের সেই তিক্ত ঘটনাটা? সেই যো, যেটায় অনিল কাপুর আর অনুরাগ কাশ্যপ পারস্পারিক বাক–বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন?
১৩টা সুপারহিট ছবির নায়ক, ৬টা ফিল্মফেয়ার জেতা অনিলের মতে, অনুরাগের মতো হলিউডের ‘টুকলিবাজ’ পরিচালকরা আজকে অপ্রাসঙ্গিক। এখনও বাণিজ্যিক ছবি, তাদের ঢিনচ্যাক আবরণ ও নায়কের ক্যারিশমাই প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানে; অনুরাগদের তৈরি ডার্ক ছবি পাত্তা পায় না সেখানে।
অন্যদিকে ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’, ‘দেভ ডি’, ‘মনমরজিয়া’, ‘সেকরেড গেমস’খ্যাত অনুরাগের দাবি, অনিল বেঁচে আছেন তাঁর পুরনো কিছু সিনেমার নাম ভাঙিয়ে। সেদিনের ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘লাখান’, ‘শিবাজী রাও’রা আজ ন্যুব্জ। শীঘ্রপতিত।
একটি ছবিতে পরিচালক না নায়ক––– কার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ––– এই প্রশ্নে ১৮০ ডিগ্রি বিপরীতমুখী অবস্থানে চলতে থাকে ক্ল্যাশ অফ টাইটান্স। মনে আছে, অনিল সেবার অনুরাগের পায়ে চুপটি করে জল উলটে দেন? বদমেজাজি–মাথাগরম অনুরাগও রাগ ধরে রাখতে পারেন না। প্রাইম টাইমে তিনিও গ্লাস থেকে জল ছুড়ে মারেন অনিলের মুখে। বিগ ব্রেকিং হয়ে যায় তা।
স্টারডম অস্তগামী সূর্যের মতো নামতে থাকা নায়ক এবং ইন্ডাস্ট্রিতে স্ট্রাগল করে টেকার চেষ্টারত পরিচালক––– অস্তিত্বের দুই মেরুর সংঘাতে সেবার তপ্ত হয়ে ওঠে বলিউড। মনে পড়ছে কি? অনিল কাপুর বনাম অনুরাগ কাশ্যপ। অনুরাগ কাশ্যপ বনাম অনিল কাপুর।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অস্তিত্ব টেকানোর সংগ্রামের এই নগ্নতা নিয়েই মুক্তি পেল বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের নতুন ছবি: একে ভার্সাস একে। ২৪ ডিসেম্বর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি।
নায়ক–পরিচালকের এই দ্বন্দ্ব আসলে চিরায়ত। প্রথম পক্ষ মুম্বইয়ে থেকে সেখানকার জমি কিনে নিচ্ছে, তাকে ‘নিজের’ বলে দাবি করছে, আর নিজেকে সেই জমির ‘লর্ড’। দ্বিতীয় পক্ষ আসছে ছোট শহর থেকে।
মফস্সল বা শহরতলির ধুলোবালিমাখা এই পক্ষ মোলায়েম ফ্যান্টাসি বা হিরোইক হায়ারার্কি নয়, বাস্তব জীবনকে মিশিয়ে দিতে চাইছে চলচ্চিত্রের শিরায়। মুম্বইয়ের ধমনিতে। প্রথম পক্ষের হাতের মুঠোয় বলিউডের প্রযোজনাশিল্প; সেই লক্ষ্মণরেখা কাটিয়ে ভিতরে ঢুকতে অপারগ এবং খানিক ক্রুদ্ধও দ্বিতীয় পক্ষ। বলাই বাহুল্য, প্রথম পক্ষের প্রতিনিধি অনিল কাপুর। তারপর? শুনুন…
লেখা: সোহিনী সেন
পাঠ: শ্যামশ্রী সাহা
আবহ: রবি মাঝি