সাধারণত যুদ্ধ বিষয়ক ছবি বলতেই আমাদের মনে পড়ে যায় একধরনের আদর্শগত সুড়সুড়ি, যেখানে সারাক্ষণ মানুষ মারা আর নিজেরা মরে যাওয়া।রক্ত, হত্যা আর ধ্বংসলীলাকে সম্বল করে বিগ বাজেট স্পেকট্যাকল নির্মাণ এবং তার সমর্থনে একগাদা আদর্শের ট্যাবলেট গেলানো হয়। হলিউড সাধারণত প্রচুর পুঁজি সম্বল করে এ ধরনের ছবি বানানোয় সিদ্ধহস্ত। ইদানীং বলিউডও সে দৌড়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই।
চিত্রনাট্যকার ম্যাথু মাইকেল কারনাহানের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘের ছবি ‘মসুল’ খানিক সচেতনভাবে আর পাঁচটা সচেতন যুদ্ধের ছবি থেকে দূরত্ব বজায় রাখে।জ্যঁরের নিয়মকানুন মেনেও, মূলত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যুদ্ধের মধ্যে থেকেও হয়ে উঠতে চায় মানুষের বেঁচে থাকার গল্পের সমতুল্য।
‘আইএসআইএস’। ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া। কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। ২০১৪ থেকে যাদের দাপ আর দাপটে কাঁপছে সিরিয়া থেকে ফ্রান্স। বেলজিয়াম থেকে পাকিস্তান। ভারত থেকে লন্ডন। মোগাদিসু থেকে ইজরায়েল। ইরাকের মসুল থেকে ‘আইএসআইএস’ সন্ত্রাসবাদীদের সরাতে সোয়াট–এর যে–অভিযান ––– সেই কাহিনিকে কেন্দ্র করেই ছবি।
কিন্তু হঠাৎ কেনই বা দেখবেন ‘মসুল’?
দেড়–দু’মাস আগে খাস পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ থেকে ধরা পড়ে একাধিক সন্ত্রাসবাদী। প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষে–পরোক্ষে আন্তর্জাতিক এই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। অথবা তাদের হয়ে কাজ করে। ধৃতদের জেরা করে জানা যায়, আপনার ঘরের পাশে, এই উলুবেরিয়াতে আইএসের জন্য প্রায় ৩৭ জনকে রিক্রুট করেছিল তারা। ওই ৩৭ জনকে উত্তরপ্রদেশ বা কেরলের কোনও জঙ্গলে ট্রেনিং দেওয়ার কথা ছিল। পুরো কাজটির জন্য পয়সা আসত সদর দফতর তথা মধ্যপ্রাচ্য থেকে। ইরাক, সিরিয়া, লেভান্তে বসে থাকা আইএসের হর্তাকর্তারা তা নিয়ন্ত্রণ করত। যাদের খবর এই করোনাপর্বেও বাংলা দৈনিকের হেডলাইন হয়, কীভাবে তারা রাজ করছে মধ্যপ্রাচ্য? কীভাবেই বা তাদের হাত থেকে মুক্ত করতে সংগ্রাম চালাচ্ছে সেই দেশের শান্তিকামী মানুষরা? শুনতে ইচ্ছে করে না? ‘মসুল’ তারই গল্প। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শুভচেতনাসম্পন্ন মানুষের সংগ্রামেই তো এক হয়ে যায় মুর্শিদাবাদ আর মসুল। আমরা দূউউউর থেকে দেখি। শুনি। একাত্ম হই।
ছবির শুরুতেই দেখা যায়, স্থানীয় দুই পুলিশকর্মীকে ‘সোয়াট’ উদ্ধার করে বেশ অনেকক্ষণ গুলিগোলা চলার পর। ছবিটি শুরুই হয় সংশ্লিষ্ট গুলির লড়াইয়ের শেষ কয়েক মুহূর্ত দিয়ে। মেজর জাসেমের নেতৃত্বে গঠিত সোয়াট বাহিনী পুলিশকর্মীদের মধ্যে একুশ বছরের যুবক কাওয়া’কে নিজেদের সঙ্গে নেয়। কাওয়ার সঙ্গী আরেক কর্মী দলে ঢুকতে পারে না। এই এখানে এসেই আমরা প্রথম একটি নিদর্শন পাই যেখানে দেখা যাচ্ছে: নিছকই বন্দুক আর গুলির লড়াইয়ের বাইরে সোয়াটের অভিযান কেন ব্যক্তিগত। সোয়াট বাহিনীতে একমাত্র তারাই কাজ করতে পারে যাদের পরিবারের কেউ নিহত হয়েছেন আইএসআইএস-এর নৃশংসতায়। তাই একদিকে এ লড়াই যেমন বৃহত্তর অর্থে মসুল শহরকে আইএসআইএসের হাত থেকে রক্ষা করার, সমান্তরালভাবে তা ব্যক্তিগতও। প্রিয়জনের হত্যাকারীদের নিদের হাতে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দেওয়ার সুযোগ।
লেখা: সায়ন্তন দত্ত
পাঠ: কোরক সামন্ত