বোম্বাইতে এসে হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া-র সাথে দেখা হল বিখ্যাত সন্তুর বাদক পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে যুগলবন্দিতে শিব-হরি জুটি বলিউড ফিল্মে একের পর এক হিট এবং অন্যরকম সুরের গান দর্শকদের উপহার দিয়েছিল। সেই তালিকায় উজ্জ্বল উদাহরণ, ‘সিলসিলা’, ‘চাঁদনি’, ‘ডর’, ‘লমহে’।
’৬৭ সালে আরও এক উড়ানের শরিক হল এই জুটি। ব্রিজভূষণ কাবরার সঙ্গে মিলে তৈরি হল অ্যালবাম ‘কল অফ ভ্যালি’। সেই অ্যালবাম অজস্র পরিসংখ্যান তৈরি করল, আবার অজস্র পরিসংখ্যান ভেঙেও দিল। পশ্চিমা দুনিয়ার জর্জ হ্যারিসন থেকে বব ডিলান অনেকেরই আগ্রহ এবং প্রশংসার বিষয় হয়ে উঠল।
হরিপ্রসাদের জীবন এক বাঁক নিল গুরুমা অন্নপূর্ণা দেবীর সঙ্গে সাক্ষাৎে। বাবা আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব হরিজির বাঁশি শুনে পরামর্শ দেন তাঁর বিদুষী কন্যার কাছে শিখতে যেতে। প্রথম সুযোগে পারেননি। বোম্বাই থাকাকালীন গেলেন। অন্নপূর্ণা বাজান সুরবাহার। হরিজি শিখতে চাইছেন বাঁশি। এদিকে ফিল্ম মিউজিক করেন। প্রথম সাক্ষাতে অন্নপূর্ণা দেবী বাড়িতে ঢুকতেই দেননি। এদিকে, হরিজিও হাল ছাড়ার পাত্র নন। বারবার হন্যে হয়ে ফেরেন। অন্নপূর্ণা একদিন রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলেন, ‘বারবার কেন আসছ! এবার কিন্তু পুলিশ ডাকব। বলেছি না আমি শেখাতে পারব না। দরকার হলে তুমি পণ্ডিত রবিশঙ্করের কাছে শেখো।’ হরিজি নাছোড়। তিনি অন্নপূর্ণা দেবীর কাছেই শিখবেন। এইভাবে তিন বছরের নাছোড় চেষ্টায় হরির জেদ আর শেখার ইচ্ছেয় অন্নপূর্ণা দেবী রাজি হলেন। কিন্তু শর্ত রাখলেন। ওঁর কাছে শিখতে গেলে একেবারে শুরু থেকে শিখতে হবে। একেবারে সা রে গা মা থেকে। আগের যা কিছু শেখা সব ভুলে যেতে হবে। যাকে বলে ‘আনলার্ন’ করতে হবে।
এদ্দিন তিনি বাঁশি বাজাতেন ডান হাতে, কিন্তু এবার থেকে বাঁ হাতে ধরে বাজাতে হবে। এই হাত বদলের কথা শুনে পণ্ডিতজির বেশ কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু তাতেও তিনি রাজি।
লেখা: সুশোভন প্রামাণিক
পাঠ: সঞ্জিতা মুখোপাধ্যায়
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস