অনেকেই বলেন, শক্তি চট্টোপাধ্যায়-কে নিয়ে আলোচনার একটি প্রধান অসুবিধা হল: তাঁর বিষয়ে তৈরি হওয়া জনশ্রুতিগুলো তাঁর ইমেজকে প্রায় ‘মিথ’-এ পরিণত করেছে। তার মধ্যে কোনটা যে গল্প আর কোনটা যে ‘সত্য ঘটনা অবলম্বনে’, এ আজও নির্ধারণ করা মুশকিল!
মাত্র দশ পয়সা আর দু’পকেট ভর্তি কবিতা নিয়ে বেরতেন এক জামাকাপড়ে। চিন্তাহীন হয়ে দু’–পাঁচদিন নানা জায়গায় কাটিয়ে বাড়ি ফিরতেন। তাঁর যাওয়া ও ফেরা দুই–ই ছিল মর্জিমাফিক এবং অনির্দিষ্ট। কবিপত্নি মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায় একবার জানিয়েছিলেন, ‘বসে আছি রান্না চাপাব বলে, শক্তি বাজার করে ভুলেই গেল ফিরতে। বন্ধুকে খাওয়াবে বলে ডেকে এনে নিজে বেমালুম বেপাত্তা হয়ে গেল!’
মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়ের এরকম আরও একটি অনবদ্য অভিজ্ঞতা হয়েছিল।
“একবার দিন তিনেক এরকম কেটে যাওয়ার পর ফোন মারফৎ খবর পেলাম, ত্রিপুরার কোন সভায় গিয়েছে। চিন্তায় পড়লাম, একবস্ত্রে ওই দূরদেশে সভায় গেল! দশদিন বাদে একটা টেলিগ্রাম এল, ‘রিচিং ভোপাল সেফলি’। তারপরদিনই সকালে দরজা খুলে দেখি, হাসিমুখে রঙিন পাজামা-পাঞ্জাবি পরে ভোপালের ভারতভবন-ফেরত শক্তি দাঁড়িয়ে।”
এমনতর একটি ঘটনা তো প্রায় মিথ, তিনি নাকি সকালে বাজারে বেরিয়েছিলেন। কেউ বলেন বাড়ির জন্য চা কিনতে, কেউ বলেন বাজার করতে, কারও মতে সিগারেট কিনতে। কারণটা যাই হোক, তারপর বেপাত্তা! তখন যোগাযোগ অত সুগম নয়। চারিদিকে খোঁজখবর করা গেল। চেনা কোনও জায়গায় তিনি নেই। দু’–তিনদিন খোঁজার পরেও পাওয়া যায় না। অতঃপর জানা গেল, তিনি নাকি উত্তরবঙ্গ ডুয়ার্স হয়ে সোজা ভুটান চলে গিয়েছিলেন!
শক্তিকে নিয়ে এক অদ্ভুতুড়ে গল্প শুনিয়েছেন বুদ্ধদেব বসু কন্যা মীনাক্ষী দত্তও।
ক্রিসামাসের আগের সন্ধেবেলা শক্তি তাঁর বাড়িতে হাজির। ওঁকে দেখেই মীনাক্ষীর ঘোষণা, ‘আমাদের কাছে কিন্তু মদও নেই, টাকাও নেই।’ শক্তির বললেন, ‘টাকা নেই বলবে তো।’ মীনাক্ষী কন্যার বন্ধু সন্দীপ ও আত্মীয় আকুলকে নিয়ে নানা গণ্যমান্যের বাড়িতে চাঁদা তুলতে বেরলেন। কয়েক বাড়ি সেরে গাড়ি পৌঁছল টালিগঞ্জ ফাঁড়ির সামনে। বেচারি ট্রাফিক পুলিশ ওঁকে দেখে, ‘স্যর স্যর’ করে এগিয়ে এলেন। শক্তি তাঁকে হেঁকে বললেন, ‘এই এতক্ষণ ধরে কত ঘুষ পেয়েছিস তার ঠিক নেই। ছাড় শিগগির কিছু।’ পুলিশের কাতরোক্তি, ‘স্যর, এই বিটে আজকেই যোগ দিলাম। এখনও কিছু পাইনি, লরিও চলতে শুরু করেনি।’ শক্তি বললেন, ‘তাহলে যা, সামনের দোকান থেকে একটা বোতল চেয়ে নিয়ে আয়।’ পুলিশ ঘুষ দিয়ে ছাড়া পায় এমন ঘটনা আগে বোধহয় খুব ঘটেনি।
শুনুন…
লেখা: সুশোভন প্রামাণিক
পাঠ: কোরক সামন্ত
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস