প্রথম সবকিছু-র হিসেব সবার না-ও থাকতে পারে। তবে অনেকেই কিন্তু ধূসর দিনলিপির পাতায় আর হলদেটে স্মৃতির খাতায় সেসব সযত্নে তুলে রাখেন। চিলেকোঠার ঘরে লুকিয়ে আনা আচারের মতো আস্তে আস্তে রোমন্থন করেন। শিল্পীর কাছে তাঁর পয়লা অনুপ্রেরণাটি বরাবরই উদ্যাপনযোগ্য– যাকে বলে ‘চেরিশেব্ল’। সেরকমই কিছু অনুপ্রেরণার কথা তুলে ধরলেন সংগীত ও সাহিত্যদুনিয়ার তারকারা। ‘প্রথম ভাললাগা’ বিভাগে সেসব মণিমুক্তো সংগ্রহ করে রাখল টিম ‘শোনো’।
সেদিন রেডিওতে বাজছিল ‘না মন লাগে না’। গাইছিলেন লতা মঙ্গেশকর। এই প্রথম ওঁর গান শোনা। গানের কথা, সুর, কণ্ঠ সবকিছুই ক্রমশ বিভোর করে তুলছিল তাঁকে। কী যে অমোঘ জাদু ছিল তাঁর গানে! সেদিন থেকেই লতাজির গায়কীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে ওঠেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। অপেক্ষা করে থাকতেন আবার কবে লতা মঙ্গেশকর গাইবেন। বারবার বোঝার চেষ্টা করেছেন, কেন তিনি লতাজির কণ্ঠস্বরে বিবশ হয়ে যান। কী আছে ওই গলায়, ওই গানে?
একটু বড় হয়ে উপলব্ধি করেন লতাজির গানের মাধুর্য কোথায়। গানের কথা ও কণ্ঠস্বরের মধ্যে শুধু ভাব নয়; রং, রূপ, রস, গন্ধ আছে। এর সঙ্গে সুরের রূপ, রস, গন্ধের মিলনে সংগীতের জন্ম হয়। কথার মধ্যে যে ছবিটা আঁকা হয়, সেটা সুরের মধ্যে দেখাতে পারলে তবেই গান হয়। আর সেই গান মরমে এসে জায়গা করে নেয়। লতাজির গানে এই ম্যাজিকটাই তাঁকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখত। অনেকের গানের তিনি পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, কিন্তু লতাজির মতো কেউ তাঁকে আবিষ্ট করতে পারেনি। ‘না যেও না রজনী এখনও বাকি’ আজও তাঁকে আবিষ্ট করে রাখে।
এরপর রাগপ্রধান গানের সঙ্গে যখন অজয়ের গাঁটছড়া বাঁধা হয়, তখন তিনি মান্নাদের ভক্ত হয়ে ওঠেন। রাগের আধারে এমন দরদী গান একমাত্র মান্নাদাই গাইতে পারতেন– এমনটাই তাঁর অভিমত। সময় পেলেই ছুটে যেতেন মান্নাদার কাছে।
মনের কোণে একটা ইচ্ছা অনেকদিন থেকেই লুকিয়ে ছিল, সেটা আরও প্রবল হয় বড়ে গুলাম আলি খাঁ সাহেবের গান শোনার পর। বন্ধুর বাড়িতে গ্রামোফোনে শুনেছিলেন ওঁর গান। তখনই ঠিক করে নেন বড়ে গুলাম আলির কাছে গান শিখবেন। আর ঠিক সেই সময়েই মারা যান গুলাম আলি খাঁ সাহাব। অজয় তালিম নিতে শুরু করেন তাঁর ছেলে মুনওয়ার আলি খাঁ সাহেবের কাছে। বদলে যায় চারপাশের পৃথিবী।
আর কী বললেন অজয় চক্রবর্তী?
শুনে নিন…
লেখা: শ্যামশ্রী সাহা
পাঠ: শ্যামশ্রী সাহা, সুশোভন প্রামাণিক, সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস