পুরাণ এমন কিছু মানুষের সন্ধান দেয় যাঁদের অস্তিত্ব সম্পর্কে ইতিহাস সঠিক প্রমাণ দিয়ে উঠতে পারে না কখনও কখনও। এমনই এক মানুষ গুণাঢ্য। তাঁর আদৌ কোনও শরীরী অস্তিত্ব ছিল কি না, সে বিষয়ে বিতর্ক থেকেই গিয়েছে। কিন্তু লোকজীবনের পরত থেকে উপাদান সংগ্রহ করে তিনি যে সংকলন করেছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক থাকার কথা নয়।
গুণাঢ্যের জন্মবৃত্তান্ত নিয়েও যে কাহিনি প্রচলিত, তা একান্তই পৌরাণিক। মহাভারতের সময়পর্বের খানিক পর বা সমসময়েই তিনি জন্মগ্রহণ করেন বলে শোনা যায়। কাহিনি মতে, দেবী পার্বতীর অভিশাপে স্বর্গের মাল্যবান মর্ত্যে জন্মে তিনি পিশাচদের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। একটু একটু করে শিখে নেন পৈশাচি ভাষা। একথা বলে দেওয়া জরুরি—‘পিশাচ’ থেকে ‘পৈশাচি’ শব্দের উৎপত্তি। মহাপুরাণের সেই সময়ে পৈশাচি ভাষা ছিল সাধারণের কাছে অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং কুরুচিকর। সাধারণ মানুষের এই ভাষা ব্যবহারের অধিকার ছিল না। লোকজীবনের ব্যবহৃত ভাষার মধ্যেও স্থান ছিল না রহস্যাবৃত এই ভাষার। এই ভাষার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জটিল তন্ত্র সাধনা ও মার্গীয় সূত্রের চর্চা হত। যার এই ভাষা ধারণের ক্ষমতা নেই, এরকম কেউ যদি জোর করে এই ভাষা শেখার চেষ্টা করত, তাহলে অভিশপ্ত হওয়া এমনকী প্রাণহানির আশঙ্কাও নাকি থেকে যেত! গুণাঢ্য এই ভাষা ব্যবহার করে তাঁর গ্রন্থ সম্পূর্ণ করেন। সাত বছর সময়কালে সাত লক্ষ শ্লোক রচনা করেছিলেন তিনি; যা পরিচিত ‘সত্তবিদ্যাধর কাহিনী’ নামে। পৈশাচিক ভাষায় রচনা এবং পুঁথির নকল বা চুরির চিন্তায়—এই দুই বিশেষ কারণে গুণাঢ্য নিজের রক্ত দিয়ে রচনা করেন সম্পূর্ণ পুঁথিটি।
বৃহৎকথার এই কাহিনি সারা পৃথিবীতে প্রচার করার উদ্দেশে গুণাঢ্য দ্বারস্থ হন মহারাজ সাতবাহানের। তাঁর দুই শিষ্য গুণদেব ও নন্দীদেবের হাতে পুঁথি পৌঁছে যায় রাজার দরবারে। মহারাজ পুঁথি প্রকাশ করতে রাজি হন না। কারণ, পুঁথির ভাষা। অগত্যা গুণাঢ্যের শিষ্যদ্বয় পুঁথি নিয়ে ফিরে আসেন গুরুর কাছে। অত্যন্ত দুঃখ ও গ্লানিতে তিনি চলে যান এক জনবিহীন পাহাড়ে সেখানে তৈরি করেন এক সুবিশাল অগ্নিকুণ্ড। তারপর একটি একটি করে পাতা পড়ে শোনান প্রকৃতি-জীবকূল-বনের পশু-পাখিকে। পড়ে শোনান আর একটি একটি করে ফেলে দেন আগুনে।
তারপর? শুনুন…
লেখা: বিতান দে
পাঠ: সুশোভন প্রামাণিক
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস