শীতকাল মানেই চড়ুইভাতি, কাছেপিঠে ঘুরতে যাওয়া, ঘাসের গালিচায় রোদ্দুর পোহানো আর ফ্রুটকেক–কমলালেবুর সঙ্গে মরশুমি মিষ্টি হিসাবে পাতে মোয়া। বাঙালির মিষ্টি মানচিত্রে হরেক কিসিমের মিষ্টির সঙ্গে মরশুম এবং ভৌগলিক অবস্থান জুড়ে রয়েছে। যেমন বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা, জনাইয়ের নিকুতি, কৃষ্ণনগরের সরভাজা, তেমনই কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের যেখানেই যান, আপনাকে দেখতে হবে ‘জয়নগরের মোয়া’। কিন্তু আদতে গোটা পশ্চিমবঙ্গে যে–মোয়া পাওয়া যায়, তা কি সত্যিই জয়নগরের? মোয়ার উৎপত্তিস্থলও কি তবে জয়নগর?
আসুন শুনে নিই সেইসব গপ্পো।
উনিশ শতকের শুরুর কথা। বহরুর জনৈক ‘যামিনী বুড়ো’র বাড়িতে কিছু একটা অনুষ্ঠান ছিল। সন্দেশ বা মন্ডা কেনার পয়সা বুড়োর ছিল না। কিন্তু অভ্যাগতদের তো মিষ্টি মুখ না করিয়ে তো ফেরত পাঠানো যায় না। জমির কনকচূড় ধানের খই আর নলেন গুড় মিশিয়ে মণ্ড পাকিয়ে বুড়ো সেদিন অভ্যাগতদের মধ্যে পরিবেশন করেছিলেন। নতুন সোয়াদের এই মিষ্টি খেয়ে সকলেই ধন্য ধন্য করেছিলেন, সেই বোধহয় মোয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। মোয়ার যদি উদ্বোধন বহরুতেই হয়, তাহলে জয়নগরের নাম কেন?
এখানেই কাহিনির বিস্তার। এমনিতেই যামিনী বুড়ো যে–মোয়া বানিয়েছিলেন, সেখানে খই আর গুড় ছাড়া কোনও উপাদান ছিল না। কিন্তু মোয়া বানাতে লাগে এলাচ, পেস্তা, খোয়া ক্ষীর, কাজু বাদাম, কিসমিস, ভাল মানের গাওয়া ঘি এবং অবশ্যই ভাল মানের নলেন গুড়। বহরুর কারিগররা সেই সময়ে তাঁদের সামর্থ্য এবং অন্যদের রসনার কথা মাথায় রেখে মোয়া তৈরি করতেন। কিন্তু বহরু ছিল এক ছোট্ট জনপদ। সেখানে কোনও বড় বাজার ছিল না। যা ছিল আবার জয়নগরে।
‘জয়নগর’ নামের নেপথ্যের ইতিহাস এবং এই জায়গা সম্বন্ধে আমাদের একটু জানা প্রয়োজন।
জয়নগরের পুরো নাম ‘জয়নগর-মজিলপুর’। স্থানিক ইতিহাস গবেষকদের কেউ বলেন, দেবী জয়চণ্ডীর নাম অনুসারে জয়নগর নামের উৎপত্তি। রয়েছে আরও এক অভিমত। প্রাচীনকালে এখানে প্রচুর টোল ছিল, পণ্ডিতরা এখানে নব্যন্যায়ের চর্চা করতেন। এই রাস্তা দিয়েই আদি গঙ্গা প্রবাহিত। দক্ষিণ ভারতীয় তর্কশাস্ত্রের পণ্ডিতরা এই রাস্তা দিয়ে গঙ্গাসাগর স্নানে যাচ্ছিলেন। ফেরার পথে এক তর্কসভার চ্যালেঞ্জ হয়। সেই তর্কসভায় স্থানীয় নব্যন্যায়ের পণ্ডিতদের জয়লাভ হয়। তারপর? শুনুন…
লেখা: সুশোভন প্রামাণিক
পাঠ: সুশোভন প্রামাণিক
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস