ফাল্গুনী পূর্ণিমার দিন সকাল সকাল পাখাল-পান্তা ভুজা-মুড়্হি খেয়ে বেলুন-বালতি-পিচকিরি দিয়ে দোলোৎসব তথা রংয়ের খেলাও শুরু হয়।
তবে ওই ছা-ছানা, বেটা-বিটি, যুবক-যুবতীদের মধ্যেই। কিন্তু তারাশঙ্করের ওই যে ‘কানু বিনে গতি নাই’! মধ্যাহ্ন গড়িয়ে অপরাহ্ণ হতে না হতেই হরিমন্দির, দোলমঞ্চ ধুয়ে-পুঁছে সাফা!
ঘর ঘর থেকে আসতে লেগেছে ‘সিধা’! ‘করে সিধে-সামগ্রী আয়োজন, দেন পাঠায়ে বহুজন।’ ঝকঝকে কাঁসার থালায় চিড়াভোগ, বাতাসাভোগ। আর নানা রংয়ের ‘ফাগ’।
জঙ্গলমহলে কবে যে শুরু হয়েছিল এই দোল! কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যেও দেখি দোলের আয়োজন–
তথি দোলমঞ্চ আমি করিব রচনে॥
হরিদ্রা কুঙ্কুম চুয়া করিয়া ভূষিত।
ফাগুদোল করিয়া গোঁয়াব নিত নিত॥
সখী মেলি গাব গীত, সখী মেলি গাব গীতি।
আনন্দিত হয়ে সবে কৃষ্ণের চরিত॥’দোলযাত্রা শ্রীকৃষ্ণর দ্বাদশ যাত্রার একযাত্রা। মূলত বিষ্ণুভক্ত অর্থাৎ বৈষ্ণবদেরই প্রধান উৎসব। তবু বঙ্গে, রাঢ় বঙ্গে, কি জঙ্গলমহলে রাধাকৃষ্ণর বিগ্রহে, তুলসী চউরায়, পরস্পরের গায়ে ফাগ ও রং দেওয়া যেন সর্বজনীন। যেন বা বসন্তোৎসব।
একদা বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর পরমভক্ত রাধারানি ও ষোড়শ গোপিনীর সঙ্গে এই ফাল্গুনী পূর্ণিমার দিনে মিলিত হয়ে রঙে রঙে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন।
রং তো নয়, আসলে প্রেম-ভক্তি বিতরণ। তাই দোলযাত্রা ভক্তি প্রেমের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেযাত্রায় ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে ওই ফাল্গুনী পূর্ণিমার দিনেই মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যর আবির্ভাব দোলযাত্রাকে অধিক ফাগে ও রঙে রঞ্জিত করেছে।
‘মধুরা যাবার ছলে আসি ঝারিখণ্ড–
ঝারিখণ্ডে স্থাবর জঙ্গম হয় যত।
কৃষ্ণ নাম দিয়া প্রেমে কৈল উন্মত্ত॥’
লেখা: নলিনী বেরা
পাঠ: কোরক সামন্ত
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস