বর্তমান বাংলার এলিট কালচার ভুলতে বসেছে হরিনাথ দে-কে। ৩৪ বছরের ছোট্ট জীবনটাকে নিজের ভালবাসা আর ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কতটা বড় করে তোলা যায় তার প্রমাণ হরিনাথ। ৩৪টি ভারতীয় ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন অবলীলায়! ভাষার প্রতি এমন ভালবাসা বাংলা কেন, ভারতীয় ইতিহাসেই বা আর ক’টা দেখেছেন বলতে পারেন? হরিনাথের ভাষাপ্রেমের কাহিনিই আজ শোনাব।
১৮৯৬-এ লাতিন এবং ইংরেজিতে যুগ্মভাবে কেবল স্নাতক স্তরেই উর্ত্তীর্ণ হন না, পান স্কলারশিপও। ওই একই বছরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে উর্ত্তীর্ণ হন স্নাতকোত্তর! কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ট্রাইপোস’ নামক এক সম্মান অর্জন করেছিলেন এই অখ্যাত বাঙালি। বিশ্বখ্যাত বহু অধ্যাপকের সান্নিধ্যে আসেন। গ্রিক, লাতিন, ফরাসি, জার্মান-সহ একাধিক ভাষায় করেছেন স্নাতকোত্তর!
পালির পরীক্ষা চলছে ক্লাসে। জটিল এক অংশ চোখে পড়েছে ছাত্র হরিনাথের। তৎক্ষণাৎ সেটিকে ইংরেজিতে অনুবাদ শুরু করেন! আরেকবার চলছে সংস্কৃত পরীক্ষা। হরিনাথ তখন আর ছাত্র নন, অধ্যাপক। একইসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট সদস্যও বটে। কঠিন সংস্কৃত প্রশ্নপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললেন হরিনাথ, কিন্তু প্রতিবাদে ক্রমশ জলঘোলা হতে লাগল। অন্যরা হরিনাথের সংস্কৃত জ্ঞান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেন। এই মনোভাব বরদাস্ত করেননি মানুষটি। জেদ করে নিজেই বসে পড়েছিলেন পরীক্ষায়। অবশ্য ছাত্রদের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে দিতে মাঝেমধ্যেই উঠে গিয়ে তদারকিও চালাচ্ছিলেন পরীক্ষা হলের। ফল বেরলে অভিযোগকারীরা বুঝতে পারেন, হরিনাথের সংস্কৃত জ্ঞান নিয়ে মশকরা করা একদম উচিত হয়নি।
ভাষার প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণের পাশাপাশি তাঁর ছিল আরেকটি শখ। বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য বই সংগ্রহ করতেন। সহকর্মী হেনরি অর্নেস্ট স্টেপলস্টন সাহেবকে একবার এরকমই এক দুষ্প্রাপ্য বই তুলে দিয়েছিলেন তাঁর প্রয়োজনে। কখনও চলে গিয়েছেন বাংলাদেশের কোনও গণ্ডগ্রামে, খুঁজে পেয়েছেন ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম্’-এর প্রাচীন পুঁথি; কখনও পেয়েছেন বৈরাম খানের পাণ্ডুলিপি; তো কখনও আবার শাহজাদা দারাশুকোর করা বেদের ফারসি অনুবাদ! হরিনাথের সেই বিরল সংগ্রহশালা সংরক্ষিত হয়নি। মাত্র তিন হাজার টাকায় তা বিক্রি হয়ে যায়!
লেখা: বিতান দে
পাঠ: সুশোভন প্রামাণিক
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস