টালিগঞ্জ খালের পুল পেরিয়ে পুঁটিয়ারীর দিকে হেঁটে চলেছেন বিভূতিভূষণ, হঠাৎ দেখা এক সন্ন্যাসীর সঙ্গে। কথাপ্রসঙ্গে এক আশ্চর্য প্রশ্ন করেন সেই সন্ন্যাসী, ‘তোর মরে যাওয়া বউকে তুই দেখতে চাস?’ এও কি সম্ভব! বিভূতিভূষণ স্তম্ভিত। সন্ন্যাসী বলতে থাকেন, ‘যাবে না কেন? বামুনের ছেলে গীতা তো পড়েছিস। তাতে দেখিসনি, ভগবান বলেছেন আত্মা অবিনাশী?’ সন্ন্যাসীর শাস্ত্রজ্ঞানে বিস্মিত হন তিনি, জানতে পারেন অশরীরী আত্মার বিচরণ সম্পর্কে ব্রহ্মসূত্রের বিভিন্ন কথা। সন্ন্যাসীর ব্যাখ্যায় কার্যত মোহিত হয়ে পড়লেন বিভূতিভূষণ! জীবনের অপার-অসীম রহস্যকে জানার আকুলতা পেয়ে বসে তাঁকে। মনে মনে হয়ে ওঠেন ভীষণ অস্থির। একদিন জানিয়েই দেন নিজের মনের কথা সন্ন্যাসী, ‘আমি গৌরীকে দেখতে চাই।’
বিভূতিভূষণের প্রথম স্ত্রী গৌরী দেবী মারা যান, তিনি তখন ব্যারাকপুরে। ওই একই রাতে মারা যান শাশুড়ি কামিনী দেবীও! সেই মৃত স্ত্রীর আত্মা আনা সম্ভব? সন্ন্যাসী জানান, সম্ভব। এর একমাত্র সহজ পদ্ধতি ‘মণ্ডল’ অর্থাৎ প্ল্যানচেট! আত্মা আবাহনের এই পদ্ধতি বিভূতিভূষণকে শিখিয়ে দিলেন সেই সন্ন্যাসী আর তারপরেই মেতে উঠলেন বিভূতিভূষণ। সমস্ত কাজ প্রায় ভুলেই গেলেন! কে ছিলেন এই সন্ন্যাসী? না, পাওয়া যায়নি সেই উত্তর। কয়েকদিন পরে আর পুঁটিয়ারীতে গিয়ে সেই সন্ন্যাসীর দেখা পাননি বিভূতিভূষণ।
পুত্র তারাদাস তখন অসুস্থ। এক বিদেহী আত্মা নাকি নিতে এসেছিলেন তাঁকে! সন্তানকে আঁকড়ে ধরে বিভূতিভূষণ বলেন, ‘আমার আয়ু দিচ্ছি। তুমি চলে যাও।’
ঘাটশিলায় একটি সভায় বক্তব্য রাখতে যান, তখন ঘটে আরও এক রোমাঞ্চকর ঘটনা। সেই ঘটনা জানলে শিহরিত হতে হয়।
ঘাটশিলার ফুলডুংরি ঘুরতে গেছেন বিভূতিভূষণ। হাঁটতে হাঁটতে এক স্থানে দেখতে পান ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো আর খানকয়েক পাথর। সেইখানে উল্টানো রয়েছে শববাহী একটি খাট। খাটিয়ার উপরে ঢাকা দেওয়া এক মৃতদেহ। বিভূতিভূষণ এগিয়ে যান, তারপর একটানে সরিয়ে দেন সেই মৃতদেহের চাদর।
চাদর সরাতেই চিৎকার করে ওঠেন আর্ত স্বরে! এ কার শরীর? কাকে দেখছেন তিনি? মুখটি যে অবিকল তাঁর! খাটের উপর শায়িত এই মৃতদেহ যে তাঁরই! তাঁর চিৎকারে ছুটে আসেন কয়েকজন। ঘামতে ঘামতে নেমে আসেন নিচে, সারা শরীরে কাঁপুনি! সঙ্গীরা বুঝতে পারেন না, কিন্তু বিভূতিভূষণ বুঝতে পারেন সব।
সময় এসে গিয়েছে।
লেখা: বিতান দে
পাঠ: কোরক সামন্ত
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস