এসপ্ল্যানেড চত্বরে যারা নিয়মিত অথবা মাঝে মধ্যেই যান, এলিট সিনেমার উল্টোদিকে যে রাস্তা সোজা এগিয়ে যাচ্ছে, সেই রাস্তাতেই। আমিনিয়া রেস্তরাঁর ঠিক পাশেই রং মহল বারের লাগোয়া অনেকেরই হয়তো চোখ আটকেছে একটি পানের দোকানে। কলকাতা শহরের অলিতে গলিতে মোড়ে ফুটপাথে হাজারো পানের দোকান রয়েছে। হঠাৎই এই পানের দোকান নিয়ে গপ্পো ফাঁদার কারণ কি! দরকারই বা কি!
কারণ আছে, এই দোকান, যার নাম তাজমহল পান শপ। সে দোকানের হরেক পসরা ছাড়া গোটা দোকান জুড়ে রয়েছেন, মোহাম্মাদ রফির উপস্থিতি। প্রত্যহ সকাল থেকে রাত্রি সেখানে নিয়ম করে বাজে রফি সাহাবের গান। ২৪ ডিসেম্বর রফি সাহাবের জন্মদিনে আমরা কথা বলেছিলাম, সেই দোকানের কর্ণধার মোহাম্মদ মনিরুদ্দিনের সঙ্গে। কথায়, নানা তথ্য এল, স্মৃতিতে এল মেহগনি ঘ্রাণ।
সত্তরোর্ধ মনিরুদ্দিন, তাঁর প্রথম জীবন শুরু করেছিলেন, বম্বের ‘ফিল্মিস্তান’ স্টুডিয়োতে ক্যামেরম্যানের সহকারি রূপে। সেই সূত্রে কাছ থেকে কতই না তাবড় তাবড় বলিউড তারকাকে দেখেছেন। সে তালিকা যথেষ্ট দীর্ঘ, সায়রাবানু, নার্গিস, দিলিপকুমার, রাজ কাপুর, অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খান্না, কে নেই সেই তালিকায়। গান শুনে আগেই মোহাচ্ছন্ন হয়েছিলেন, মানুষ রফি’র সান্নিধ্যে এসে, ঘোর যেন কাটে না তাঁর। এত বড় গায়ক, সেলিব্রিটি। কিন্তু শিশুর সরলতা আর সাগরের মত হৃদয়। ছোটবেলা থেকে ফকিরের সান্নিধ্যে তাঁর গান আর মন গড়ে উঠেছিল, তাই তিনিও যেন ছদ্মবেশী পয়গম্বর, ‘গরীব নওয়াজ’। টাকা পয়সা নিয়ে ভাবনা করেন না, শুধু সুর বোঝেন, গান বোঝেন।
রোজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় গরীব গুর্বো যাকে দেখতেন তাকেই সাধ্যমত সাহায্য করতেন। যে কোনও বিপদে যে কেউ সাহায্য চাইলে, কাউকেই খালি হাতে ফেরাতেন না। এমন আশ্চর্য অমায়িক মানুষটি, যার বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখেন বাহান্নটা মেহগনি কাঠের আলমারি। তাঁর ব্যাক্তিত্বের প্রেমে না পড়ে থাকা যায়! অতয়েব মনিরুদ্দিন রফি সাহাবের গানের প্রেমে পাগল তো ছিলেনই, এবার মানুষ রফির প্রতি মুগ্ধতায় ফানাহ হলেন। তারপর? শুনুন…
লেখা: সুশোভন প্রামাণিক
পাঠ: শ্যামশ্রী সাহা
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস