বাগবাজার ঘাট পেরিয়ে অলিগলির মধ্যে শোভাবাজার বা কুমোরটুলি যাওয়ার পথে পড়ে আহিরিটোলা। এই আহিরিটোলায় যাওয়ার পথে যে কাউকে যদি পুতুলবাড়ির কথা জিজ্ঞেস করেন, আপনার দিকে তাঁরা একনজর সন্দেহের চোখে তাকাবেন; তারপর অবশ্যি সঠিক রাস্তা বলে দেবেন। সতেরো নম্বর শোভাবাজার স্ট্রিট এই হল বাড়িটির ঠিকানা। এই বাড়ি সংলগ্ন এলাকার মানুষদের নাকি নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে।
কখনো গণেশ টকিজ এলাকায়, কখনো সিমলাপাড়া, কখনো বা বি কে পালের মোড়ে স্থানীয় অধিবাসীরা নানা সময়ে নানা অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন!
প্রবল গরমে হঠাৎ এসে পড়ে কোনো আগন্তুক, খাওয়ার জন্য জল চায়। জল নিয়ে আসার পর দেখেন আগন্তুক উধাও!
জনৈক ট্যাক্সির কাছে এলেন কোনো সওয়ারি। ট্যাক্সিচালক বসালেন গাড়িতে, খানিক এগোনোর পর হঠাৎ মনে হতে লাগল পিছনের সিটটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা! তাকিয়ে দেখেন পিছনে কেউ নেই! ট্যাক্সি সম্পূর্ণ ফাঁকা!
এইসমস্ত ঘটনা আজকের নয়। বহুদিন যাবৎ স্থানীয় অধিবাসীরা বলে চলেছেন এমন সব তাজ্জব ঘটনাক্রম। কলকাতায় রহস্যজনক অশরীরী আনাগোনা বা ভুতুড়ে কার্যকলাপের শিরোনামে উঠে আসে পুতুলবাড়ি। আহিরিটোলার প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো ইতিহাসকে বয়ে নিয়ে চলেছে এই রোমান স্থাপত্য নিদর্শন। অনেকেরই বিশ্বাস এই বাড়ির উপরতলায় নাকি অশরীরীদের আবাসস্থল! দিনের বেলায় উত্তর কলকাতার বহু অংশেই ভালো করে আলো ঢোকে না। সারাদিন স্যাঁতস্যাঁতে ভাবের সঙ্গে অন্ধকারের বসতবাটি। পুতুলবাড়ির অবস্থানও এমনই এক জায়গায়। এই বাড়ির নীচের একটি অংশে ভাড়া থাকেন বেশ কিছু পরিবার। উপরের অংশেও কিছু বাসিন্দা থাকেন বটে তবে বিকেলের পর আর কেউই উপরে উঠতে চান না! তাঁদের বক্তব্য ছাদে ওঠার সিঁড়ি ভাঙা, তাছাড়া পুরনো বাড়ির বিভিন্ন অংশই ভেঙে পড়ছে, তাই সন্ধ্যে নামলে খানিক সাবধানতা নেওয়া জরুরী। প্রতিবেশীরা যদিও এসব মানতে নারাজ। সন্ধের পর থেকে নাকি মাঝেমধ্যেই পুতুলবাড়ির উপরের অংশ থেকে ভেসে আসে নুপূরের আওয়াজ! কখনো আবার নারীকণ্ঠের আর্ত চিৎকারও পাওয়া যায়! অনেকে দেখেছেন কিছু অবয়বকে ঘুরে বেড়াতে। তাদের দূর থেকে দেখলে পুতুল বলে মনে হতে পারে! শুনতে পাওয়া যায় রহস্যজনক হাসির শব্দ। সাদা শাড়ি পরে নাকি দেখতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতপরিচয় কিছু মহিলাকেও!
পুরোটা শুনুন উপরের প্লে বাটনে ক্লিক করে।
লেখা: বিতান দে
পাঠ: কোরক সামন্ত ও শ্যামশ্রী সাহা
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস