গ্রামবাসী বিস্মিত হয়ে বিশ্বাস শুরু করলেন, হরিমোহন আসলে অলৌকিক শক্তির অধিকারী। হরিমোহন নিজেও এই সুযোগে প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়িয়ে ফেললেন। গ্রামবাসীরা হরিমোহনকে গুরুজ্ঞানে শ্রদ্ধা করতে শুরু করলেন। এই শ্রদ্ধার মধ্যে ছিল কিছুটা ভক্তি, কিছুটা ভয়।
কামরূপ–কামাখ্যা ঘুরে আসা হরিমোহনের উপাস্য বিগ্রহ ছিল বাঁশের তৈরি। তাঁর চালাঘরের মাটির বেদীতে প্রতিষ্ঠিত ছিল সেই বিগ্রহ। দিনে তিনবার সেখানে পুজো দিতেন। গ্রামের কুলীন পরিবারের তরুণী কমলা সে পুজোর ফুল তুলে আনতেন। এই কমলা আবার নিজেকে হরিমোহনের শিষ্যা ভাবতেন।
গুরু–শিষ্যা সম্পর্ক অবধারিতভাবে প্রেমে পরিণত হয়। গ্রামের লোকেদের কাছেও সেই সম্পর্ক স্পষ্ট হতে থাকে। কুলীন কন্যার পরিবারও তা জানতে পারে। কিন্তু হরিমোহনকে কিছু বলার সাহস কারও হয় না, পাছে অলৌকিক শক্তির বলে কোনও ক্ষতি করে বসে! এদিকে ব্রাহ্মণ পিতা বিচলিত হয়ে পড়েন। একদিকে কুলীনশ্বের ভয়, অপরদিকে হরিমোহনের। এইরকম একটা সময়ে শেষ পর্যন্ত পিতা অতি গোপনে এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণকে রাজি করান। তাঁর সঙ্গে তরুণী কমলার বিয়ে দিয়ে কৌলীন্য রক্ষা করেন।
এদিকে কমলার অন্তরজুড়ে হরিমোহন। কিন্তু হরিমোহনের কিছুই করার থাকে না। শাঁখা–সিঁদুর পরে বৃদ্ধ স্বামীর সংসারে যেতে বাধ্য কমলা। ব্যথিত হতাশ হরিমোহন বেশিরভাগ সময় বিগ্রহের সামনে বসে থাকেন। দেড় বছরের পর মলা বিধবা হন। তৎকালীন নিয়ম অনুযায়ী তরুণী কমলাকে সহমরণে যেতে হয়। স্বামীর মৃতদেহের সঙ্গে কমলার শ্মশানে যাওয়ার খবর পেলেন হরিমোহন। ভালবাসার মানুষটা পুড়ে ছাই হয়ে যাবে––– এটা হরিমোহনের পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব ছিল। নাই বা কাছে পেলেন, বেঁচে থাকলে একদিন হয়তো কমলাকে দেখতে পাবেন, এই ভেবে তিনি শ্মশানে গিয়ে কমলার পিতাকে বললেন, ‘আমি বাঁচিয়ে তুলব মৃত কমলাকে’। তাঁর কথায় দোটানায় পড়লেন কমলার পিতা। আদরের মেয়ের জীবনে রং–রূপ–স্বাদ না–পেয়ে চিতায় উঠতে যাচ্ছে। অন্যদিকে সমাজের ভয়ে তিনি নিজে কিছু বলতেও পারছেন না। অতঃকিম্, ডোম হরিমোহনের কথায় কিছুটা আশাবাদী হলেন কমলার ব্রাহ্মণ পিতা। কমলাও নতুন আশায় বুক বাঁধলেন।
তারপর?
শুনুন…
লেখা: সুশোভন প্রামাণিক
পাঠ: শ্যামশ্রী সাহা
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস