প্রায় ১০ মাসের অপেক্ষার অবসান। দ্রুত আসতে চলেছে করোনার বহু প্রতীক্ষিত ভ্যাকসিন। ৩ ডিসেম্বর কলকাতা পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম-এর উপর পরীক্ষামূলকভাবে কোভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছিল। তিনি সুস্থ আছেন। ঘোষণা করেছেন––– ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শেষ হলেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর নির্দেশে শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে গণ টিকাককরণ শুরু হবে।
অনেকেই জানেন না, দু’-দু’টি মহামারীকে রুখে দেওয়ার গবেষণা ও প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়েছিল এই কলকাতাতেই। সেই না-জানা ইতিহাসের গল্প আজ আমরা শুনব।
প্রথম গল্পটি কালাজ্বরের প্রতিষেধক ‘ইউরিয়া স্টিবামিন’-এর আবিষ্কার নিয়ে। সেই আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্যর উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর নাম। কলকাতার ক্যাম্পবেল হাসপাতালে, আজ যা এনআরএস হাসপাতাল বলে পরিচিত, সেখানকার ছোট্ট একটি ঘরে নামমাত্র পরিকাঠামো সম্বল করে টানা সাত বছরের গবেষণার ফসল ছিল কালাজ্বরের প্রতিষেধক টিকা। এরপরই, মানব সভ্যতা কালাজ্বরের অভিশাপ থেকে মুক্তির আলো দেখতে পায়। স্যর উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর বৈজ্ঞানিক মননও স্বীকৃতি পায়।
দ্বিতীয় গল্পটি ম্যালেরিয়া সংক্রান্ত গবেষণা। যাঁর কেন্দ্রীয় চরিত্র স্যর রোনাল্ড রস। আসুন, শোনা যাক সেই গল্পটি।
উনিশ শতকের শেষ। কলকাতার পিজি হাসপাতালে, বর্তমান এসএসকেএমে চিকিৎসক হিসাবে যোগ দিয়েছেন এক ইংরেজ ডাক্তার, নাম রোনাল্ড রস। ছোটবেলায় নিজের বাবাকে তিনি হারিয়েছিলেন ম্যালেরিয়ায়। তাই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এই রোগ নির্মূল করবেনই। ততদিনে শুধু এটা জানা গিয়েছিল যে মশার কামড় থেকেই ম্যালেরিয়া হয়। কিন্তু কোন ধরনের মশা? কীভাবে ছড়ায় এই রোগের জীবাণু? রোনাল্ড রস খুঁজতে শুরু করলেন সেই উত্তরগুলোই। এবং নামমাত্র পরিকাঠামোর উপর নির্ভর করে খুঁজে বের করলেন ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ প্রণালী এবং এই রোগের ক্ষেত্রে অ্যানোফিলিস মশার ভূমিকা। অ্যানোফিলিস মশার পুরো জীবনচক্র তুলে ধরেছিলেন তিনি। ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ শৃঙ্খলকে ভেঙে দেওয়ার এই অভূতপূর্ব আবিষ্কারকে অবশ্য নোবেল কমিটি উপেক্ষা করতে পারেনি।
কলকাতা মহানগরীর সঙ্গে এইভাবেই নাম জড়িয়ে রয়েছে দু-দু’টি মারণ ব্যাধি প্রতিরোধের গবেষণার ইতিহাস।
লেখা: সানু ঘোষ
পাঠ: সুশোভন প্রামাণিক