২৫ ডিসেম্বর হোক বা ১ জানুয়ারি, পার্ক স্ট্রিট মানেই এখন জনজোয়ার। শহর কলকাতার অন্যতম ‘ব্র্যান্ডেড’ রাস্তা এই পার্ক স্ট্রিট চত্বর। রংবেরঙের পোশাক–পরা মানুষের ঢল, আলোর রোশনাইয়ে ঝলমলে ক্রিসমাস ট্রি, সান্তার টুপি আর রঙিন শিং লাগানো তরুণ-তরুণীদের হুজুগে উল্লাস––– এমনকী, এই করোনা আবহেও বাদ যাচ্ছে না কোনও কিছুই।
কিন্তু গোটা কলকাতার সব অংশ ছেড়েছুড়ে বছরশেষে কেন এই পার্ক স্ট্রিটেই এমন স্বপ্নিল সমাবেশে মাতে বাঙালি? অন্য কোথাও কেন নয়? কলোনিয়াল হ্যাংওভার নাকি তার সঙ্গে মিশেছে আরও কিছু? কেমনই বা ছিল কলকাতার শুরুর দিককার পার্ক স্ট্রিট? আসুন শুনে নিই।
আচ্ছা, জব চার্নকের কলকাতায় কি অটো চলত? রুবির মোড়ে সকাল-সন্ধ্যার জ্যাম আর ধোঁয়ায় কল্লোলিনীকে সাপ-সাপান্ত করা বাঙালি তখন কোথায়! হুগলি নদীর তীরে কিছু গ্রাম আর জল-জঙ্গল। খাতায়–কলমে কলকাতা সত্যিই তখন ‘ধ্যাদ্ধেরে গোবিন্দপুর’।
‘এলিট’ পার্ক স্ট্রিটের রাস্তায় তখন বাস্তুহীন লোকেদের আনাগোনা, ‘সাহেবপাড়া’ অভি বহত দূর হ্যায়। ১৭৬২, তৈরি হল পার্ক স্ট্রিট। ‘লটারি কমিটি’-র সুপারিশে একটু একটু করে গড়ে উঠল ‘সাহেবপাড়া’। অঞ্চলটির লোকচলতি নাম যদিও অন্য: ‘গোরস্তান কা রাস্তা’। এইটুকুই কী কেবল ইতিহাস? বাঙালির পার্কস্ট্রিটযাপন পর্বের শিকড় যে আরও গভীরে।
এলিজা ইম্পে, ব্রিটিশ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস। সালটা ১৭৭৩, ইম্পে হয়ে উঠলেন ‘স্যর এলিজা ইম্পে’। ইতিহাসের পাতায় দগদগে হয়ে থাকা মহারাজ নন্দকুমারের ফাঁসির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন এই মানুষটিই। সাহেবের শখ বলে কথা; মিডলটন রো বরাবর বিশাল এক বাগানবাড়ি। বাগানের মালিক ছিলেন উইলিয়াম ফ্রাঙ্কল্যান্ড নামক জনৈক সাহেব।
নবাব সিরাজদ্দৌলার কলকাতা আক্রমণের সময় তিনি পালিয়ে যান। কালক্রমে সেই বাড়িতেই এসে ওঠেন বিচারপতি ইম্পে। এসেই জাগল খেয়াল। শুরু করলেন হরিণ পোষা! সেই হরিণ থেকেই মুখে মুখে নাম হয় ‘ডিয়ার পার্ক’, আর পার্ক থেকে ‘পার্ক স্ট্রিট’। মেম সাহেবের আনাগোনা, খানাপিনার জবরদস্ত আয়োজন আর মধ্যরাতেও আলোয়–আলোয় ঢাকা––– এই সমস্ত আদব-কায়দায় সেইদিন থেকেই অভ্যস্ত হয়ে উঠতে শুরু করল পার্ক স্ট্রিট। তারপর? শুনুন…
লেখা: বিতান দে
পাঠ: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুশোভন প্রামাণিক ও শঙ্খ বিশ্বাস
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস