ছোট ছেলের অনলাইন পরীক্ষা চলছে। সেই ব্যস্ত শিডিউলের মধ্যেই ইরফানের জন্মদিনের স্মৃতি ঝাঁপি থেকে দু’–এক কুচি টিম ‘শোনো’–র কাছে তুলে ধরলেন স্ত্রী সুতপা সিকদার। শুনলেন শ্যামশ্রী সাহা।
জন্মদিনে মোটেই বিশ্বাস করতেন না ইরফান। “হি ডিডিন’ট বিলিভ ইন পার্টিকুলার ডে’জ সেলিব্রেশন অ্যাট অল”, জানালেন সুতপা। কোনওদিন সেভাবে জন্মদিন সেলিব্রেট করেননি এই যুগল। শুটিং সেটে হয়তো উদ্যাপন হয়েছে। বন্ধুবান্ধবরাও করেছে হয়তো বা। কিন্তু তাঁরা নিজেরা সেই অর্থে ‘সেলিব্রেট’ করেননি কখনও। ইন ফ্যাক্ট, ইরফান খানের নিজেরও মনে থাকত না জন্মদিনের কথা। কেউ ওঁর জন্মদিন মনে রাখেনি বলে আপসোস করেননি কখনও। মাথাও ঘামাননি জাগতিক মহার্ঘ্য উপহার নিয়ে।
জীবনের উদ্যাপনে বিশ্বাস করতেন ইরফান। মনে করতেন, প্রতিটা দিনই আলাদা করে উদ্যাপন করা যায়। বলছেন সুতপা, ‘আমি ওই নির্দিষ্ট দিনে হয়তো উপহার দিয়েছি। তবে বহুমূল্য কিছু না। কোনও কবিতার বই, যার প্রথম সংস্করণ পাওয়া যাচ্ছে না, সেটা হয়তো আমি দিয়েছি। বা কোনও গাছ পাওয়া যাচ্ছে না, আমি সারা ভারত খুঁজে কোনও জঙ্গল থেকে জোগাড় করে এনেছি। এই জিনিসগুলো ওকে নাড়া দিত। জন্মদিনে কোনও ঘড়ি বা মহার্ঘ্য উপহার দিয়েছি বলে তো মনে পড়ে না। আমাদের সম্পর্কটা আসলে ওরকম ছিলই না।’
ইরফান ভুলে গেলেও বিশেষ দিনটি ভুলতেন না সুতপা। দুই ছেলেই হোক বা ইরফান, প্রত্যেকের জন্মদিনে মনে করে পায়েস রান্না করতেন বাড়িতে। আর ইরফান তা তৃপ্তিভরে খেতেনও। ‘আমার মা আসলে এই সংস্কারটায় বিশ্বাস করতেন। চাল গোনা যায় না। তাই আমরা জন্মদিনে পায়েস বানাই। এমনটাই বলতেন মা। আমিও ইরফানকে বোঝাতাম, কেন বাঙালি সংস্কৃতিতে আমরা জন্মদিনে পায়েস বানানোটাকে প্রাধান্য দিই। ওই চালের সংখ্যা গুণে না–উঠতে পারাটা আসলে রূপকার্থে ব্যবহার হয়। অগুণতি বছর মানুষটা সুস্থসবলভাবে বেঁচে থাকুক, তা–ই বলতে চাওয়া হয় পায়েসের মাধ্যমে। দীর্ঘায়ু কামনা তুলে ধরা হয় এককথায়।’ বললেন সুতপা।
শুনুন…
ব্যবহৃত গান, ‘আহা রে জীবন’-এর কথা শারমিন সুলতানা সুমি, সুর পাভেল আরিন
গানটি গেয়েছেন এ. মারুফ।
ব্যবহৃত কবিতার অংশটি ভাস্কর চক্রবর্তী’র।
লেখা: শ্যামশ্রী সাহা, সোহিনী সেন, সুশোভন প্রামাণিক
পাঠ: সুশোভন প্রামাণিক, শ্যামশ্রী সাহা, সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
আবহ: শুভাশিস চক্রবর্তী