খোকা ঘুমলো, পাড়া জুড়ালো, বর্গি এল দেশে… এ ছড়া তো আমাদের সকলেরই জানা। আসলে এই ছড়ার ভিতর লুকিয়ে আছে বাংলার ইতিহাস। করুণ ইতিহাসই বলা যায়। সে ইতিহাস, বর্গি হানার, বাংলার গ্রামঘর তছনছ হয়ে যাওয়ার। আবার এক দুর্গাপুজোর মহানবমীতেই সম্ভব হয়েছিল বর্গি-বিদায়।
নিমাই যখন সন্ন্যাস নিয়ে শ্রীচৈতন্য হলেন, তখন নিমাই জননী নাকি দুঃখে জায়গাটিকে বলেছিলেন কণ্টকনগর। সেই থেকেই কালক্রমে কাটোয়া নামের উৎপত্তি। শ্রীচৈতন্যের বহু পরে এই কাটোয়া বাংলার রাজনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হয়ে উঠল। কারণ, অবশ্যই বর্গি হানা।
আরও শুনুন: বাংলায় প্রথম মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা করতেন গঙ্গাদেবীর পুজোও, জানেন কে তিনি?
মারাঠা বীর ভাস্কর পণ্ডিত বাংলায় এসেছিলেন অবাধ লুটতরাজের লক্ষ্যে। কাটোয়ার যে ধর্মীয় পরিবেশ, সাধনার শান্ত আবহ তা নিমেষে ভেঙে গিয়েছিল বর্গিদের রণহুঙ্কারে। ১৭৪২ সাল নাগাদ বর্গিরা বাংলা আক্রমণ করে। আলিবর্দি খাঁ খবর পেয়ে বর্গি দমনে ছুটে আসেন, কিন্তু ঘেরাও হয়ে থাকেন বর্ধমান শহরে। এই সময় বাংলার গ্রামজীবনে নেমে আসে অন্ধকার। বর্গিদের আক্রমণ, লুটতরাজে শঙ্কিত হয়ে পড়ে বাংলার মানুষ। প্রাণ বাঁচাতে দলে দলে তাঁরা ঘর ছাড়তে শুরু করেন। বাংলার ছড়া যে কথা বলছে, অর্থাৎ বর্গির ভয়ে খোকাদের ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার কথা, তা নেহাতই কথার কথা নয়। সচ্ছল, কোলাহলমুখর গ্রাম যেন ভয়ে, আতঙ্কে সাড়হীন, নিঃশব্দ হয়ে পড়ে। মানুষ তখন প্রাণ বাঁচাতে, বর্গিদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে দলে দলে পালাচ্ছে। ‘মহারাষ্ট্রপুরাণ’ রচয়িতা গঙ্গারাম সেই ভয়াবহতার বিবরণ দিয়েছেন। যা অনুসরণ করলে আমরা বুঝতে পারি কতখানি মর্মান্তিক ছিল সেই ছবি। ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরা তাঁদের পুথিপত্র নিয়ে পালালেন। গন্ধবণিকেরা তাঁদের মালপত্র, কামারেরা তাঁদের হাতুড়ি, কুমোরেরা তাঁদের চাক, জেলেরা জাল – অর্থাৎ যার সম্বল বলতে যা, সে তাই হাতে করে নিয়েই পালিয়েছে। রমণীরাও বেরিয়ে এসেছেন ঘরের বাইরে, এমনকী গর্ভবতী রমণীও পালাচ্ছেন। উদ্বাস্তুর ঢল নামল তখন বাংলায়। সারা বাংলা যেন তটস্থ। মনে করা হয়, এই ঘরহারা মানুষরাই এককালে এসে উঠেছিল কলকাতা নগরীতে।
শুনে নিন বাকি গল্প।